জাতীয়

তথ্য মেলায় মুজিববর্ষের লিফলেট, শেখ হাসিনার বাণী প্রচার!

রংপুরে তথ্য মেলার চারটি স্টলে মুজিব বর্ষ ও শেখ হাসিনার বাণী প্রচার নিয়ে ব্যাপত তুলকালাম কাণ্ড ঘটছে। এ ঘটনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে তুমুল বাগবিতণ্ডা হয় স্টল সংশ্লিষ্টদের। এদিকে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি এবং জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন।

রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর মহানগরীর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এই ঘটনা ঘটে।জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ২ দিনের এই তথ্য মেলার আয়োজন করে। উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল।

স্থানীয়রা জানায়, মেলা উদ্বোধনের পর সেখানে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ঘুরতে যান সেখানে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পরিদর্শন করতে গিয়ে চারটি স্টলে দেখতে পান মুজিব বর্ষ ও শেখ হাসিনার বাণী সংবলিত লিফলেট প্রচার করছে।

স্টলগুলো হলো- রংপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, জেলা সঞ্চয় অফিস ও পরিবার পরিকল্পনার অফিসের স্টলে।

সেখানে বিতরণ করা লিফলেটগুলোতে লেখা ছিল, ‘নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, মুজিব বর্ষে বাংলাদেশ,’ বাঙালি জাতি এখন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলছে আগামীতেও মাথা উঁচু করে চলবে, সেটাই হবে আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা – মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার মুজিববর্ষের লোগোও দেখা যায় লিফলেটে।

এ ধরনের ফ্যাসিবাদের লিফলেট বিতরণ করার বিষয়টি নিয়ে সেখানে প্রতিবাদ জানায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

তারা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করছেন’ । এ নিয়ে সেখানে কর্মকর্তাদের সাথে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার বলেন, ‘৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালালেও তার দোসররা এখনও সবখানে বিরাজমান।

তারা নতুন করে শেখ হাসিনা তত্ত্বকে ইস্টাবলিষ্ট করতে চাচ্ছে। পতিত হাসিনার ফ্যাসিস্ট কাঠামোগুলো জাগ্রত করতে চাইছে। আজকের সরকারি স্টলগুলো থেকে তথ্য মেলার নামে বঙ্গবন্ধুর মুজিববর্ষের ছবিসহ শেখা হাসিনার সেই সেই ফ্যাসিস্ট বাণীর লিফলেট বিতরণ করা হলো। এটা আমরা কোনভাবেই মানতে পারছি না। এরা কিভাবে এই সাহস পায়। সেটাও বুঝলাম না। এর মাধ্যমে ২৪ এর জুলাই বিপ্লবকে চ্যালেঞ্জ করছে শেখ হাসিনার সরকারি দোসররা। অবিলম্বে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করতে হবে।

এ ব্যপারে রংপুর জেলা মৎস্য স্টলে থাকা পীরগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা কাওসার হোসেন জানান, সব কিছুই নতুন করা হয়েছে। অফিস থেকে সব কিছু আমরা দেখেই নিয়ে এসেছি। তারপরেও আনফরচুনেটলি এটা হয়ে গেছে। প্রতিবছর বছর নতুন নতুন লিফলেট ছাপানো হয় তো। এই লিফলেটটা মনে হয় আগের বছরের। সেগুলো এই বছরের সাথে চলে এসেছে। এটা আমাদের অজান্তে ভুল হয়েছে।

স্টলে উপস্থিত সহকারী পরিচালক সঞ্জয় ব্যানার্জি জানান, মেলায় আছি। সব কিছু্ নতুন করা হয়েছে। কিন্ত লিফলেটগুলো করা হয়নি। এটা ভুল হয়েছে।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা কর্মসংস্থান এবং জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মালিক মোহাম্মদ তৈমুর গোফরান বলেন, ‘এখানে বঙ্গবন্ধুকে প্রোমোট করা হচ্ছে না। যেটা আগে প্রিন্ট করা ছিল। ওইটাই আর কি। এরপর তো আমাদের আর কোন নতুন কিছু প্রিন্ট করে দেয় নাই। আমাদের হঠাৎ করে মেলায় স্টল দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তাই আমরা সময়ও পাই নাই। তাই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাণী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত লিফলেটই নিয়ে এসেছি। নতুন করে ছাপালে আমাদের ১৫ দিন সময় দেওয়া লাগে। তাই যা ছিল তাই নিয়ে এসেছি। আমি বলে দিচ্ছি। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলেই ভালো হয়।’

রংপুর জেলা প্রশাস কমোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘স্টল পরিদর্শনের সময় প্রথমে নলেজে আসেনি। বাট পরে আমি সেটা দেখতে পাই ‍দুটি স্টল থেকে একটি মন্তব্য এবং লোগো সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে যা আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের। এটা জানা মাত্রই জেলা মৎস অফিস এবং কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে জানতে চেয়েছি। এটা কিভাবে আসলো। কেন আসলো। তারা দুজনই আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।’

তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম। যদি ফ্যাসিস্ট সরকারের কোন কিছু লিফেলেট থাকে সেগুলো নষ্ট করতে। কিন্তু কেন সেগুলো তারা করলো না। সব মিলিয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা চেয়েছি এবং লিখিতভাবে যা যা করণীয় দরকার সেটা করবো।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক আলমগীর নয়ন বলেন, ‘এখনও পতিত হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারি কর্মকর্তারা এ ধরনের সাহস পায় কিভাবে। সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। জেলা প্রশাসন শুধু মৌখিকভাবে তাদের সতর্ক করলো, ব্যাখ্যা চাইলো। এটাও আমরা মানতে পারছি না। প্রশাসনের রন্দ্রে রন্দ্রে থাকা এসব ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে হবে। নইলে আবারও আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হবো