১৪৪ ধারা জারি

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি জারি করা হয়েছে। পাহাড়ি ও বাঙালি সংঘর্ষের পর ১৪৪ জারি করল স্থানীয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২০ সেপ্টম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সহিদুজ্জামান।

তিনি জানান, খাগড়াছড়ি সদর ও পৌরসভা এলাকায় শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ আদেশ জারি থাকবে। এছাড়া, সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থানের অনুরোধ জানান তিনি।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতভর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সদরসহ পুরো জেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতের গোলাগুলি ও বিকালের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।

নিহতরা হলেন- জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)। এদিকে নাশকতা রোধে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো.সহিদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যে কোনো ধরনের সহিংসতা রোধে এ ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার রাতে (আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টা) জেলা শহরের নারানখখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত গুলির শব্দ পাওয়া যায়।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটিতেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনায় জড়িত উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন একজন। তবে নিহতের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এসময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোশারফ হোসেন খান স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৪৪ জারি করা হয়।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাঙ্গামাটি জেলার পৌরসভা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে এবং জনগণের জানমাল ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আজ শুক্রবার দুপুর ১টা হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার পৌরসভা এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ মোতাবেক ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদিবাসী ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাঙামাটি শহরের বনরূপা এলাকায় আসে।

এ সময় তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকানে হামলা চালায়। খবর পেয়ে বাঙালিরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কিছু দোকানে অগ্নিসংযোগও করা হয়। পরে সেনবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে শহরে এখনো পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। শহরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ‘পাহাড়ি ও বাঙালিদের’ মধ্যে সংঘর্ষ থেকে স্থানীয় বাজারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

জেলা পুলিশ সুপার আরিফিন জুয়েল বলেন, সেখানে পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা চলছিল। সেখান থেকেই বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

স্থানীয়রা বলেন, বুধবার সকালে চুরির অভিযোগে ‘গণপিটুনিতে’ মামুন নামে এক যুবক হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে লারমা স্কয়ারের দোকানপাটে আগুন দেয় একপক্ষ। এতে ৬০ থেকে ৭০টি দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।