রংপুরকে হারিয়ে প্রথমবার বিপিএলের ফাইনালে সিলেট

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরে ভাগ্য বদলালো সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজির। প্রথমবারের মত বিপিএলের ফাইনালে জায়গা করে নিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। ৯ আসরে ৬ নাম নিয়ে অংশ নেয়া ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ফাইনালে নিয়ে গেল সিলেট স্ট্রাইকার্স। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে রংপুর রাইডার্সকে ১৯ রানে হারিয়ে ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সঙ্গী হল দলটি।

১৮২ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে ৩ রান তুলতেই স্যাম বিলিংসকে হারিয়ে বসে রংপুর। একদিন আগে রংপুর শিবিরে যোগ দেয়া এই ইংলিশ ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিবের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে এক রানে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।

সঙ্গী হারালেও রনি তালুকদারের সাথে তিনে নেমে জুটি বাঁধেন শামীম পাটুয়ারি। তবে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে তাকেও বিদায় নিতে হয় রুবেল হোসেনকে উইকেট দিয়ে। ১১ বলে ১৪ রানে তিনি বিদায় নেন জর্জ লিন্ডেকে ক্যাচ দিয়ে।২ উইকেট হারালেও নিকোলাস পুরানকে নিয়ে দলকে ৫০’র ওপর নিয়ে যান রনি।

আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাটিং করলেও দলীয় ৬৮ রানে ১৪ বলে ৩০ রান করে সাজঘরে ফেরেন পুরান। লুক উডকে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এই ক্রিকেটার ফেরেন ১৪ বলে ৩০ রানে। কিন্তু পুরানকে হারালেও ক্রিজে নেমে নুরুল হাসান সোহান ও রনি মিলে দলকে টেনে নিতে থাকেন।

এই জুটিতে দুজন মিলে দলকে নিয়ে যান একশোর ওপর। দুজনই হাত খুলে খেলতে থাকেন। সিলেটের বোলারদের কোন পরিকল্পনাই তখন কাজে আসছিল না, উল্টো চাপে পড়ে যায় মাশরাফিবাহিনী। তবে দলকে দেড়শোর ঘরে নিয়ে ২৩ বলে ৩৩ রানে তানজিম সাকিবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন নুরুল

সে সময় জয়ের জন্য রংপুরের প্রয়োজন ১৭ বলে ৩৩ রান। হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রনি অপরাজিত ৬৬ রানে। কিন্তু চতুর্থ বলে জাকির হাসানের চতুরতায় রান আউট হন রনি। ১৫১ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নরা।

শেষ বলে ডট দিয়ে ২ রানে ওভার শেষ করেন সাকিব। ১২ বলে রংপুরের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৩১ রান। পরের ওভারে প্রথম দুই বল ডট দিয়ে রংপুরকে আরও চেপে ধরেন উড। তৃতীয় বলে এক ওয়াইড সহ এক রান নেন মাহেদি। পরের বলেও শানাকা একরানের বেশি নিতে পারেনি।

পঞ্চম বলে দারুন এক ক্যাচ নিয়ে রংপুরকে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে দেন জাকির। ৭ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন দাঁড়ায় ২৮ রানের। এই অবস্থা থেকে আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি তাদের। শেষ বলে ডোয়াইন ব্রাভোর উইকেট নিয়ে সিলেটের ফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেন উড।

৩৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন এই ইংলিশম্যান। শেষ ওভারে শানাকার বিপক্ষে প্রথম দুই বলে টানা ৪ খেলেও তৃতীয় বলে দারুন এক ইয়র্কারে শানাকে কোন রান নিতে দেননি রুবেল। সে সময়ই নিশ্চিত হয়ে যায় সিলেটের জয়। ৩ বলে ২০ রান প্রয়োজন হলে চতুর্থ ও পঞ্চম বলে কোন রান নিতে পারেননি শানাকা। শেষ বলে এই অলরাউন্ডারকে বোল্ড করে ১৯ রানের জয় নিশ্চিত করেন এই পেসার।

এদিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নাজমুল হাসান শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটে সিলেটের শুরুটা হয় দারুণ। ৫৩ বলে ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তারা। পাওয়ার প্লে’তে শুরুর চার ওভারে দুই স্পিনার শেখ মাহেদি ও রাকিবুল হাসানকে দিয়ে বোলিং করিয়ে কোন সফলতা পেতে ব্যর্থ হয় রংপুর।

পাওয়ার প্লে’তে এই জুটি যোগ করে ৪৪ রান। তবে নবম ওভারে এসে এই জুটি ভাঙেন মেহেদী। ৩০ বলে ৪০ রান করে সাজঘরে ফেরেন সিলেটের ওপেনার। পরের ওভারেই উইকেট হারান আরেক ওপেনার হৃদয়। ২৫ বলে ২৫ রান করেন তিনি।

তিনে নেমে ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন মাশরাফি। জাকির হাসানও নেমে ব্যাট চালাতে থাকেন। তবে টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ১৩ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন তিনি। একই কাজ করেন রায়ার্ন বার্লও। ৬ বলে ১৫ রানের ইনিংস খেলে তিনি উইকেট হারান।

কিছুক্ষণ পর থিতু হয়ে থাকা মাশরাফিও বিদায় নেন ডোয়াইন ব্র্যাভোর বলে। এর আগে খেলে যান ১৬ বলে ২৮ রানের দারুণ এক ইনিংস। ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহিম আজও ছিলেন ব্যর্থ। ৫ বলে ৬ রান করে উইকেট হারান তিনি। শেষদিকে থিসারা পেরেরা ও জর্জ লিন্ডার ২১ বলে ৩৬ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় সিলেট।

১৮২ রানে ইনিংস শেষ হয় সিলেটের। ১৫ বলে ২১ রান করে রান আউট হন থিসারা। লিন্ডা করেন ১০ বলে অপরাজিত ২১ রান। রংপুরের হয়ে জোড়া উইকেট পান হাসান মাহমুদ ও দাসুন শানাকা। একটি করে উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান ও ডোয়াইন ব্রাভো।

Sharing is caring!