
সংসার খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা মানুষের কাছে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। কেননা দোকান-বাজার, যাতায়াত, চিকিৎসা খরচ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যতটুকু আয় তা দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদাটুকু পূরণ করা অনেকেরই পক্ষে সম্ভব হয় না। সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে যায় জহুরুলের কোমরের হাড়। কোনোভাবেই সোজা হয়নি তার ভাঙা কোমর।
তখনই চিরসঙ্গী হয় তার ক্রাচ। তবুও থমকে যায়নি জহুরুলের জীবন। এক যুগ ধরে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছেন কাঁধে নিয়ে ঝাঁড়ুর বোঝা। ক্রেতার অপেক্ষায় ঘুরেন পথে পথে, করেন ঝাঁড়ু বিক্রি। ৬০ বছর বয়সী জহুরুল ইসলাম বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কড়িরহাট গুচ্ছগ্রামের (ভূমিহীন ও বাস্তহারা লোকজনদের বসবাসের জন্য সরকার নির্মিত আবাস স্থল) বাসিন্দা।
তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি ওই উপজেলায় বসবাস করে আসলেও ছিলেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দা। যমুনা নদীর ভাঙনে বাড়ি-ঘর হারিয়ে নন্দীগ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। পেশায় ছিলেন কৃষিশ্রমিক। প্রায় ১৪ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। ভেঙে যায় তার কোমরের হাড়।
এরপরে আর দাঁড়াতে পারেননি কোমর সোজা করে। শুরু হয় তার ক্রাচে ভর দিয়ে পথচলা। একপর্যায়ে শুরু করেন পথে পথে ঘুরে ঝাঁড়ু বিক্রি করা। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রচণ্ড রোদে বগুড়া শহরের ফুলতলা এলাকায় কাঁধে ঝাঁড়ু বোঝাই অবস্থায় দেখা মেলে তার। কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, দাম্পত্য জীবনে তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান আছে। সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেরা কৃষিশ্রমিক। তারা আলাদা থাকেন। ৫০ বছর বয়সী স্ত্রী নূরজাহান বেগমকে নিয়ে তার সংসার। ঘরে বসে থাকলে খাবার জুটবে না। তাই শরীরের এমন অবস্থাতেও পথে পথে ঘুরে ঝাঁড়ু বিক্রি করেন।
তিনি আরো জানান, তার স্ত্রী গ্রাম ঘুরে ঝাঁড়ু তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। পরে ঘরে বসে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে ঝাঁড়ু তৈরি করেন। সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ঝাঁড়ু বিক্রি করতে বের হন তিনি। মাসে ছয় হাজার টাকার ঝাঁড়ু বিক্রি করেন।
Leave a Reply