বিরোধী ৫ নেতার সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ

বিএনপি এখন একলাই সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করা। এই দাবি নিয়ে তারা এর আগে ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছিল। সেইসব সংলাপে তারা যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। প্রথম দফার সংলাপের পর দ্বিতীয় দফায় তারা পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে এবং বৈঠকের পর হঠাৎ করে এই বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। এখন বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুগপৎ বা যৌথ নয়, তারা এককভাবেই আন্দোলন করবে। এজন্যই এখন আর ওই ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা কোনো রকম যোগাযোগ করছে না। ২২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ টুকটাক কিছু কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছে কিন্তু সেসব কর্মসূচির দিকে বিএনপির তেমন কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই।

এরমধ্যেই খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, সরকার বিরোধীপক্ষের এরকম ৫ জন নেতার সঙ্গে গোপন যোগাযোগ করছে এবং আগামী নির্বাচনসহ নানা বিষয় গুলো নিয়ে তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করছে। যে ৫ জন নেতার সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগের খবর পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন জেএসডি নেতা আ স ম আবদুর রব, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এবং বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করে এমপি হওয়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, কল্যাণ পার্টির নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির নেতা কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ এবং খেলাফত আন্দোলনের নেতা।

এদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। কারো সাথে দুই দফাও বৈঠক করা হয়েছে। কি নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানা যায়নি। তবে এই পাঁচ নেতাই এ ধরনের বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে এই পাঁচ নেতার সাথে বিভিন্ন দূতাবাসে সরকারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, কথা হয়েছে এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে। সরকার এখন অন্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বিএনপিকে একঘরে করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন করা।

সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টি সরকার বিরোধিতা করছে এতে সরকারের কোনো সমস্যা নাই। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসবে। জাতীয় পার্টির পাশাপাশি জামায়াত নতুনভাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে এবং শেষ পর্যন্ত জামায়াত নিবন্ধন পেলে জামায়াতও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া ১৪ দলীয় শরিক দলগুলো এবং মহাজোটের শরিকরা নির্বাচন করবে। বেশ কয়েকটি ইসলামী দল এবার বিপুল শক্তি নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামবে বলে সরকারের কাছে নিশ্চিত তথ্য আছে। এখন সরকার বিএনপির সঙ্গে যারা জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতো সেই ২২ দলীয় জোট, তাদেরকে নির্বাচনের মাঠে আনার জন্য নীরবে কাজ করছে। এদের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ নির্বাচনে আসবে, এমনটি আশাবাদী।

যদিও গণতন্ত্র মঞ্চ এখন পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে কিন্তু সরকার বলছে এই কঠোর অবস্থান ইতিবাচক। আন্দোলনের মাঠে থেকে নির্বাচনে আসলে ভোটের মাঠে তা উত্তাপ ছড়াবে এবং নির্বাচন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জেএসডিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচনে আনার জন্য সরকার চেষ্টা করছে। আর এ কারণেই এই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে এই কয়েকজন নেতা নীরবতা পালন করছেন এবং রাজনৈতিক বিষয় তাদের তেমন কোনো ভূমিকা এবং প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে বিএনপির ভোট বর্জনের আন্দোলন এক বড় ধরনের ধাক্কা পাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Sharing is caring!