
যশোরে এক তরুণীকে অমানবিক নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্যসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে একটি দোকানে ওই তরুণীর ওপর নির্যাতন চালান স্থানীয় ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান ও তার সহযোগীরা।।
সম্প্রতি এর দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ১৫ মার্চ সন্ধ্যার পর পার্শ্ববর্তী এনায়েতপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিল থেকে বন্ধু সাঈদের সঙ্গে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কয়েকজন তাদের রাস্তায় গতিরোধ করে।
এ সময় তারা আমাকে দুশ্চরিত্র আখ্যা দিয়ে আটকে মারপিট করে। এতো মারছে যে আমি ঠিকমত হাঁটতে পারছি না। আমার সারা শরীরে কালচে দাগ পড়ে গেছে। ব্যথা সহ্য হচ্ছে না। ভুক্তভোগী তরুণী আরও বলেন, আমাকে আনিচুর মেম্বার, আইয়ুব আলী, খোকন ও ভুট্টোসহ কয়েকজন মারপিট করে।
তারা আমার কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ও গলায় থাকা স্বর্ণের চেন ছিনিয়ে নেয়। মারপিটের খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন এসে আমাকে ছাড়িয়ে আনে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে। ভুক্তভোগী তরুণীর বন্ধু পার্শ্ববর্তী বাগযাঙ্গা সরদার পাড়ার বাসিন্দা সাঈদ হোসেন বলেন, রাত হয়ে যাওয়ায় তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলে।
আমি তাকে সাইকেলে করে আব্দুলপুর গ্রামে নিয়ে যায়। এ সময় পথে কয়েকজন আমাদের গতিরোধ করে নাম পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেওয়ার পর তারা ইউপি মেম্বারকে ডেকে আনে। এরপর গ্রামের একটি দোকানে ঢুকিয়ে আমাদের মারপিট শুরু করে। ওরা আমার বান্ধবীকে অনেক মারপিট করে। আমাকেও মেরেছে।
আমার কানে আঘাত লেগেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। ভুক্তভোগী তরুণীর মা বলেন, বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ফেরা কী এমন অপরাধ? তারাতো আমাদের ডেকে বলতে পারত। কিন্তু কীভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। মেয়ের শরীর না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। ফেসবুকে আমার মেয়ের মারপিটের ভিডিও ছড়িয়ে গেছে।
আমার মেয়ের সম্মান আর থাকল না। আনিচুর মেম্বারের বউ এখন বলে বেড়াচ্ছে মেয়েটারে মেরে ফেললেই ভালো হতো। আব্দুলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইউপি মেম্বার আনিচুর রহমানের প্রভাবের কারণে গ্রামের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয় কয়েকজন গৃহবধূ বলেন, অপরাধ করলেও এমন নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।
আমরা মেয়েটির শরীর দেখেছি সারা শরীরে কালছে হয়ে গেছে। সুন্দর মেয়েটা মারপিটের কারণে একেবারে কালো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দাউদ হোসেন বলেন, নির্যাতিত মেয়েটি, তার বাবা-মাসহ কয়েকজন আমার কাছে বিচার নিয়ে এসেছিল। আমি মেয়েটির কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখেছি।
আমার জীবদ্দশায় আমি কখনো এমন নির্যাতন দেখিনি। যে পরিমাণ মেরেছে কোনো সভ্য মানুষ এভাবে মারতে পারে না। যে কারণে আমি তাদের আইনের দ্বারস্থ হতে পরামর্শ দিয়েছি। আমিও এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক সেই প্রত্যাশা করি।
এদিকে শুক্রবার নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এরপর রাতিই অভিযান চালিয়ে ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর বাবা থানায় এসে ৪ জনের নামে মামলা করেছেন। মামলা পাওয়ার পর শুক্রবার সারারাত অভিযান চালিয়ে ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান, তার সহযোগী ভুট্টো, আজিম আলী ও তৌহিদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। আজ তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
Leave a Reply