তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আলেমদের বিপুল সম্ভাবনা

তথ্য-প্রযুক্তির ওপর ভর করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। বৈশ্বিক এই অগ্রযাত্রার অংশীদার হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণরা। কর্মক্ষেত্র হিসেবে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে তাদের। পিছিয়ে নেই তরুণ আলেমরাও।দিন দিন তাদের অংশগ্রহণও বাড়ছে। আইসিটি খাতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন দুই তরুণ আলেম মিনহাজ উদ্দিন ও মোহাম্মদ সাকিব। দুজনই ২০২২ সালে রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন।


হাফেজ মিনহাজ উদ্দিন কওমি মাদরাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করার পাশাপাশি আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল এবং ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি পরিচালনা করছেন ‘আইটি টাচ ইন কওমি মাদরাসা’। এই প্রতিষ্ঠান থেকে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। মোহাম্মদ সাকিব আলিয়া মাদরাসা থেকে ফাজিল এবং ঢাকা আলিয়া থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ‘পিক্সেন্সি’ নামে আইটি প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘পিক্সেন্সি’র বর্তমান কর্মীর সংখ্যা ৩০ জন। এখান থেকে আট শতাধিক শিক্ষার্থী আইটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা তথ্য-প্রযুক্তি খাতে যুক্ত হচ্ছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকেই হচ্ছেন। মাদরাসার পরিবেশ এখনো পুরোপুরি উৎসাহব্যঞ্জক নয়। এমনটিই জানিয়েছেন মোহাম্মদ সাকিব। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকেই আমার এই সেক্টরে আসা। টেকনোলজির প্রতি আগ্রহ জন্মে ছারছিনা মাদরাসায় পড়ার সময় থেকেই। আমি মাদরাসায় থাকতেই নিজে টাকা জমিয়ে একটি কম্পিউটার কিনি। যেন কম্পিউটারের মৌলিক বিষয়গুলো শিখতে পারি। তবে শুরু করার পর বিভিন্ন পর্যায়ে তিনজন বড় ভাই আমাকে সহায়তা ও উৎসাহ দেন। ’

মাদরাসার পরিবেশে হয়তো উৎসাহ ছিল না, তবে হয়তো বাধাও ছিল না। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের মাদরাসা শিক্ষার্থী হওয়াটাই। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল ফ্রিল্যান্সার মিনহাজ উদ্দিনকে। তাঁর ভাষায় ‘আমি যেহেতু মাদরাসা থেকে এসেছি, তাই আমাকে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সমাজে মাদরাসার ছাত্রদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা আছে যে তারা আইটির কিছুই জানে না। যেখানে শিখতে গিয়েছি সেখানে মাদরাসার ছাত্র হওয়ার কারণে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে আর কোন বিষয়টি আপনার এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল? মিনহাজ উদ্দিন বলেন, সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ইংরেজি দক্ষতা না থাকা। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ইংরেজিতে দক্ষ হওয়া আবশ্যক। আল্লাহর অনুগ্রহ ও নিজের ইচ্ছা শক্তিতে সে বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি।

তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আলেমদের সম্ভাবনা কতটুকু? মিনহাজ উদ্দিন ও মোহাম্মদ সাকিব উভয়ে একমত যে আইসিটি খাতে আলেমদের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং স্বস্তিদায়ক। বিশেষত যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চায়। কেননা এটি একটি উন্মুক্ত জগৎ। যেখানে মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারলে যে কেউ এগিয়ে যেতে পারবে। কর্মক্ষেত্রে কিছু বিষয় আলেমদের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। যেমন পর্দা বিধান মান্য করা, ইবাদত ও নামাজের সুযোগ পাওয়া ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সিংয়ে এসব বাধা নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশে আইসিটি একটি বিকাশমান খাত। এই খাতে কাজের সুযোগ সামনে আরো বৃদ্ধি পাবে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্লাস পয়েন্ট কোনটি? মোহাম্মদ সাকিবের মতে, আরবি ভাষার দক্ষতা ও অধ্যবসায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্লাস পয়েন্ট। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভেতর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কাজ করার ধৈর্য ও প্রত্যয় বেশি দেখা যায়। তারা আরবি ভাষায় তুলনামূলক দক্ষ। মধ্যপ্রাচ্যসহ বহু আরবি ভাষাভাষী দেশে বড় বড় প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা হয়। যাঁরা আরবি ভাষায় দক্ষ, তাঁরা সহজেই আরব গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া যাঁরা আরবি লাইনে পড়াশোনা করেন, তাঁরা ক্যালিগ্রাফিতে বেশ ভালো কাজ করতে পারেন। এর সঙ্গে মিনহাজ উদ্দিন যোগ করেন আলেমদের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়টি। তাঁর মতে, অনলাইন সেবায় নানা ধরনের প্রতারণা আছে। আলেমরা যুক্ত হলে মানুষ আস্থার জায়গা খুঁজে পাবে। বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করলে তাঁরা অন্যদের সঙ্গে এগিয়ে যাবেন।

আলেমদের ভেতর যাঁরা আইসিটি খাতে আসতে চান, তাঁদের জন্য মিনহাজ উদ্দিন ও মোহাম্মদ সাকিবের পরামর্শ হলো, তাঁরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করবে। সম্ভব হলে আরবি ভাষাতেও; কাজের বিষয় হিসেবে যেকোনো একটি বিষয় বেছে নেবে। যেমন গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট ক্রিয়েট, এসইও ইত্যাদি; মার্কেট প্লেস সম্পর্কে ধারণা লাভ করা। এসবের পাশাপাশি প্রবলেম সলভিং স্কিল, ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশন স্কিল এবং সর্বোপরি আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরি।

Sharing is caring!