এত বিদ্যুৎ যাচ্ছে কোথায়?

বিগত সরকারের আমলে সব থেকে বেশি আলোচনায় ছিলো বিদ্যুত ও জ্বালানী খাতের স্বেচ্ছাচারিতা। দরপত্র ছাড়াই দেয়া হয়েছে একের পর এক বিদ্যুত কেন্দ্র। এক পর্যায়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৭ হাজার ৭৯১ মেগাওয়াটে।

কিন্তু চাহিদা সর্বসাকূল্যে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কম! তারপরও ঠেকানো যায়নি লোডশেডিং। গত তিনবছর ধরে গরমের সময় এলেই লোডশেডিংয়ের মাত্র বাড়তে থাকে। এ বছর সেটা পৌঁছেছে চরমে।

কোথাও কোথাও ৮ থেকে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। তাহলে এতো সক্ষমতার এত কেন্দ্রের বসিয়ে বসিয়ে ভাড়া টেনে যাওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো কোথায়? বিদ্যুৎ-ই বা গেলো কোথায় এমন প্রশ্ন জনমনে। জনমনের এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চেষ্টা করেছি আমরা।

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দায়িত্বশীল যাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তাদের কথা গুলো মোটা দাগে দাঁড়ায়: একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে গেলেও এই বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো যে জ্বালানীতে চলবে তার সংস্থান নিশ্চিত করা হয়নি, যার কারণে আজকের অবস্থা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বলছে, দেশে দিনে গড়ে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এতে প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াটের মতো।

আরও জানা গেছে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের সামিটের মালিকানাধীন একটি টার্মিনাল মে মাস থেকে। এতে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে, যার ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন কমেছে।

অন্যদিকে বিল বকেয়া থাকায় আদানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়েছে ৫০০ মেগাওয়াট। বেসরকারি খাতে থাকা তেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও বকেয়ার অঙ্ক বেশ বড়। তারাও সর্বোচ্চ উৎপাদনে যেতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে লোডশেডিং হচ্ছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনব্যবস্থা বন্ধের দুঃসংবাদ। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিটের উৎপাদনই বন্ধ রয়েছে। সে হিসেবে ঘাটতি পড়ছে ২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। তাই লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। তবে চাহিদা মত যোগান কখনই ছিলো না। ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা ছিলো। সামিটের ভাসমান টার্মিনাল বন্ধ থাকায় সরবরাহ নেমেছে ২৬০ কোটি ঘনফুটে। আর বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ কমে দাঁড়িয়েছে ৮২ কোটি ঘনফুটে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার মেগাওয়াট। যেখানে আড়াই মাস আগেও এখান থেকে উৎপান ছিলো দৈনিক ৬ হাজার মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উৎপাদন সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল জানিয়েছেন, গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। বকেয়া বিলের চাপ থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। আশা করা যায় পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক হবে।

এদিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, গত সরকারের আমলে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে শত শত প্রজেক্ট হয়েছে। অনেক ব্যয়বহুল প্রজেক্ট হয়েছে কিন্তু সেগুলোর রিটার্নের পরিমাণ খুবই নগণ্য। যা ভ্যালু ফর মানি হয়নি। এসকল কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে খরচ এবং দাম বেড়েছে।